চার রানের আক্ষেপে পুড়ল বাংলাদেশ
লো স্কোরিং ম্যাচ আর রহস্যময় উইকেটে চার রানের আক্ষেপে পুড়ল বাংলাদেশ। তীরে এসে ডুবল তরীবাংলাদেশ ক্রিকেট টীমের । টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের।
সোমবার (১০ জুন) নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপের লো স্কোরিং ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রান করে প্রোটিয়ারা। জবাবে ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানে থেমেছে টাইগাররা।রান তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারে কাগিসো রাবাদার ওপর চড়াও হয়ে টানা দুটি চার হাঁকান তানজিদ তামিম। তবে তার করা অফ স্টাম্পের বাইরের শেষ বলটি তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ৯ বলে ৯ রান করে আউট হন তিনি। এরপর রানের গতি না বাড়লেও দলের বিপদ হতে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। ৬ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান সংগ্রহ করেছিল টাইগাররা।
কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হতেই বিদায় নেন লিটন দাস। কেশব মহারাজের করা প্রথম বলটি তুলে মারতে গিয়ে কাভারে মিলারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১৩ বলে ৯ রানে থামে তার ইনিংস। কিছুক্ষণ পর অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানও বিদায় নেন। ৪ বলে ৩ রান করে আনরিখ নরকিয়ার শর্ট বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর ক্রিজে নেমে তাওহিদ হৃদয় ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করলেও উল্টো বাড়িয়ে বিদায় নেন শান্ত। ২৩ বলে ১৪ রান করে তিনি নরকিয়ার শিকার হন। ১০ ওভার শেষে ৫০ রান তুলতে শুরুর ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।এরপর হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে চড়ে এগোচ্ছিল টাইগাররা। পঞ্চম উইকেটে তারা দুজনে মিলে ৪৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথেই টানছিলেন। তবে ১৮তম ওভারে রাবাদার বলে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লু হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় হৃদয়কে। ৩৪ বলে ৩৭ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার৷ শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১১ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি রিয়াদ-জাকের আলীরা। ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বসেন রিয়াদ৷ ২৭ বলে ২০ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। আর তাতেই বাংলাদেশের মুখের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ২৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন কেশভ মহারাজ।এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে শুরুতেই তাণ্ডব চালান টাইগার দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদ। দলীয় ২৩ রানের মধ্যে সাজঘরে পাঠান রেজা হেনড্রিক্স (০), কুইন্টন ডি কক (১৮), এইডেন মার্করাম (৪) ও ট্রিস্টান স্টাবস (০)।সুপার এইটের রাস্তা সুগম করার ম্যাচে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তানজিম সাকিব। প্রথম ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে রেজা হেনড্রিকসকে (০) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই পেসার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দ্বিতীয় সাফল্য পান সাকিব। কঠিন হওয়ার আগেই উইকেটরক্ষক ব্যাটার কুইন্টন ডি ককের স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তিনি। ১১ বলে দুই ছক্কায় ১৮ রান করতে পেরেছিলেন তিনি।এরপর হেনরিখ ক্লাসেনকে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পান মিলার। দুজন প্রথমে ৫৬ বলে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন। পরে সেটাকে বড় করে পার করেন দলীয় সেঞ্চুরি। তবে ক্লাসেনের ব্যক্তিগত ৪৬ রানে ফেরাতে ৭৯ রানে জুটি ভাঙে। জুটিতে ফাটল ধরান তাসকিন। একটু পরই ক্লাসেনের দেখানো পথে হাটেন মিলার। রিশাদ হোসেনের বলে বোল্ড হন, থামেন ব্যক্তিগত ২৯ রানে। তখন প্রোটিয়াদের দলীয় স্কোর ছিল ১৮.২ ওভারে ১০৬ রান। তবে সেটিকে আর বেশিদূর এগোতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়েছেন কাটার মাস্টার। তাতেই ১১৩ রানে থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইগারদের আর জয় পাওয়া হয়নি।সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২০ ওভারে ১১৩/৬ (হেনরিখ ক্লাসেন ৪৬, ডেভিড মিলার ২৯, কুইন্টন ডি কক ১৮; তানজিম হাসান সাকিব ৩/১৮, তাসকিন আহমেদ ২/১৯, রিশাদ হোসেন ১/৩২)।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১০৯/৭ (তাওহিদ হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০, নাজমুল শান্ত ১৪; কেশব মহারাজ ৩/২৭, কাগিসো রাবাদা ২/১৯, আনরিখ নরকিয়া ২/১৭)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : হেনরিখ ক্লাসেন।