https://www.bartomansylhet.com/

5010

bangladesh

প্রকাশিত

০১ জুন ২০২৪ ১৮:০৯

বাংলাদেশে ১৪৮ ফেসবুক আইডি-পেজ বন্ধ যে কারণে

বাংলাদেশে সংঘবদ্ধভাবে অসত্য প্রচারের কারণে ৫০টি ফেসবুক আইডি ও ৯৮টি পেজ বন্ধ করেছে ফেসবুক। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও দলটির গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে মেটা।

ফেসবুক জানিয়েছে, এসব অপকর্মের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তারা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে, যার অনেকগুলো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই চিহ্নিত হয়েছে এবং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।


বৃহস্পতিবার ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা’র ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।


মেটা যেসব অ্যাকউন্ট বন্ধের কথা বলেছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদের টুইটার অ্যাকাউন্টও (twitter[.]com/tonmoybuet) রয়েছে।


এ বিষয়ে তন্ময় আহমেদ বলেন, ফেসবুক যেভাবে লিখেছে, তা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। এভাবে তো তারা লিখতে পারে না। এই আইডি বা পেজগুলো কারা চালায়, সেটা তো তারা নিশ্চিত নয়। কিন্তু তারা ঢালাওভাবে যে অভিযোগ করেছে, সেটা সত্যি নয়। আবার ওই তালিকায় আমার টুইটার অ্যাকাউন্টের কথা বলা হয়েছে, অথচ আমার টুইটার অ্যাকাউন্টটি চালু আছে। শিগগিরই আমি আমার ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানাবো।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। আমরা তাদের কাছে কিছু আইডি বা পেজের ব্যাপারে সুপারিশ করি, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। এগুলো তারা কিভাবে করেছে, আমরা কিছুই জানি না।


মেটার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চক্রটি বাংলাদেশভিত্তিক এবং এদেশের মানুষই ছিল তাদের প্রধান টার্গেট৷ এই পেজগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি একেবারে কল্পিত কোনো সংস্থার পরিচয় দিয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের নাম ব্যবহার করেছে। কিছু পেজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নাম ব্যবহার করেছে এবং বিএনপিবিরোধী কনটেন্ট পোস্ট করেছে। এসব পেজের বিচরণ ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মেও ছিল। পাশাপাশি নিজেদের ওয়েবসাইটও ছিল।


এই ধরনের অপপ্রচারের বিষয়ে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ডিআইজি শ্যামল কুমার নাথ বলেন, এই ১৪৮টি পেজ বা আইডির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। 


তবে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি তারেক আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় আমরা ফেসবুকের কাছে তালিকা পাঠাই। সেখানে এই নামগুলো আছে কিনা, সেটা তো না দেখে বলা যাবে না। তবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আইডি বা পেজগুলোর বিরুদ্ধেই আমরা রিপোর্ট করি। যে পেজ বা আইডিগুলো বন্ধ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল, সেটা তো আমরা জানি না।


মেটার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চক্র প্রধানত বাংলা ভাষায় এবং ইংরেজিতে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে সংবাদ ও চলতি ঘটনা পোস্ট করতো। পাশাপাশি বর্তমান সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এর ভূমিকা এসব সমর্থন করে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতো।


মেটা বলছে, তারা অনুসন্ধানে এসব কর্মকাণ্ড স্প্যাম ও অসত্য কর্মকাণ্ড বলে দেখতে পেয়েছে। যদিও এর নেপথ্যের ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেছে, তার পরেও মেটার অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগ এবং সিআরআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সরিয়ে দেওয়া আইডি ও পেজগুলোতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩৪ লাখ ফলোয়ার ছিল। এসব পেজ থেকে ৬০ ডলার বিজ্ঞাপনের জন্য খরচের কথাও জানিয়েছে মেটা, যা টাকায় পরিশোধ করা হয়েছে।


বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমরা সরাসরি মেটার কাছে কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু আমরা আগাগোড়াই বলে আসছি, আমাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার করছে। এতদিন এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন মেটা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় প্রমাণিত হলো আমরা যে অভিযোগ এতদিন করে আসছিলাম তা সত্যি। বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো, কিন্তু এখানে কোনো ধরনের অপপ্রচার, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করব না। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে এগুলো হচ্ছে।


তবে মেটার এই ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। তিনি বলেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এভাবে একটা দলের বিরুদ্ধে লিখতে পারে না। ওই আইডি বা পেজগুলো কারা চালাতো? কোনো বিএনপি সমর্থকও ওগুলোর মালিক হতে পারেন। আবার সারা বিশ্বে আমাদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেটা তো তারা দেখলো না। বিদেশে বসে পিনাকি কী করছে, অন্যরা কী করছে? আমি তো মনে করি, এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।


সেলিম মাহমুদ আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তো প্রযুক্তির এত উন্নতি হয়েছে। এখন সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করা হবে, সেটা তো মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি থাকা জরুরি৷ আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবো। এ ব্যাপারে অবশ্যই আমরা কিছু একটা করবো।