https://www.bartomansylhet.com/

4007

economics

প্রকাশিত

২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০২:৩৪

আপডেট

৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

উত্তরের সাহিত্য 

উত্তরের সাহিত্য ১অতঃপর হেমলক

আলী সিদ্দিকী

 

তুমি নিথর হয়ে এলে মুখরিত হয় 

রাতের নৈঃশব্দ্য, জোনাকবন আর

বিবাগী বাতাসের পাখার আওয়াজ-

অতঃপর সজাগ নদীর ঢেউ মূর্চ্ছনার।

 

কাকতালীয় বাতাসে সচল ফিসফাস 

পাতার সংসারে জাগে উড়ালভঙ্গি

তোমার আঙুল বোনে বিরহের শোক

আগুন পানির বুদবুদে হৃদয় অঙ্গাঙ্গী।

 

বিনিদ্র মুহূর্ত গুণে পরিস্ফুট অর্গল

টুপটাপ ঘামঘ্রাণে, ওষ্ঠ হয় হৃদয় চলক

অবিরাম ঘন্টা বাজে শঙ্খের নিনাদে-

অতঃপর মুখে দাও মায়াময় হেমলক।

 

 

 

বেরিয়ে আসো হিমানী আলমারি থেকে

জি এইচ আরজু

 

মরা ইলিশের চোখ দিয়ে

কী দেখছো তুমি অমন করে?

কেনিয়ার শপিং মলে অসহায় জিম্মিদের 

বীভৎস মৃতদেহ

সিরিয়ায় বিষাক্ত গ্যাসে মুহূর্তে মরে যাওয়া 

শতশত শিশুর সারিবদ্ধ লাশ।

সোমালিয়ার সমুদ্র উপকূলে নিরীহ নাবিকদের নিয়ে 

জলদস্যুদের ইঁদুর বিড়াল খেলা,

নাকি পূর্ণিমার আলেকিত চাঁদে

একজন মানবতা বিরোধীর খুনি খুনি চেহারা! 

আজকাল টেলিভিশনের পর্দায়

মাদার তেরেসা আর ডেসমন্ড টুটুরা

বড় বেশি ‌অনুপস্থিত

ওয়াংবেরি মাথাইয়ের নাম তো

একেবারেই শোনা যায় না।

মরা ইলিশের চোখ দিয়ে 

কী দেখছো তুমি অমন করে? 

বেরিয়ে আসো ওই। হিমানী আলমারি থেকে

রাজপথে প্রগতির মিছিল

যে মিছিল কিশোরী মালালা ইউসুফ জাইয়ের

তোমাকেও প্রয়োজন আজ এই মিছিলে।

 

 

 

অদৃশ্য আলামত 

রিজোয়ান মাহমুদ 

 

তোমার কোমল পায়ে আমারই গাঁ 

আমি গ্রাম প্রধান না হয়ে কৃষক হলাম, 

কি এক অদৃশ্য আলামতে -

পীড়নের ক্ষরণ না বুঝে 

তোমার নাভিকমলে সকাল দেখেছি,  

মুখাকৃতির স্থাপত্য 

দেহের সংগীত যেন প্রাচীন শৃঙ্গারে গাঁথা 

গুহাশিল্পের মতন অভাবিত বাঙময়। 

তোমার পা' দুটো কবিতাময় ঘুঙুর - তার ধ্বনি 

আমাকে বিদীর্ণ করে, 

একটি নদীর সাঁকো নড়বড়ে কেঁপে ওঠে

চন্দ্রবিন্দু লজ্জা নিয়ে একটি কবিতা  

অগোছালো বদ্বীপ পেরিয়ে যায়।

আমি ধাক্কা খেতে খেতে তৎক্ষণাৎ 

কুপোকাত জলে -

পতনের এই লজ্জা হেনাবিবি কখনো-ই জানবে না।

 

 

 

জলের পাতায় বৈরাগী মাছ

তানভীর হক

 

গোধূলির পাটাতনে বহমান নদ 

মানচিত্র ফুঁড়ে করেছে নিরুদ্দেশ যাত্রা 

বলিরেখায় ভীষণ স্পষ্ট আদি আবেগ 

বিলুপ্ত ছিটমহল সময়ের আক্রা 

 

সহজিয়া সুর বাজে অশ্রুসন্ধ্যায়

মাতাল প্রেমিকের কবিতায় দগদগে ক্ষত

জলদস্যু হানা দেয় শিল্পীর পোতাশ্রয়ে

প্রশিক্ষক নরকের জলকন্যা যত

 

নদ আকাশ পানে চেয়ে

গোধূলির প্রলোভনে একাকিত্ব কাটাতে চায় 

মদিরাতেও অসাধ্য প্রাক্তনের স্মৃতি নিরাময় 

জলগাড়ি মেঘ ছুঁতে চায় 

 

রজনীর চেয়ে দীর্ঘ গোধূলিতে

সমুদ্রের খাতায় ভাসে শৈবাল গাছ

সুগন্ধি নেই বেদনার আখ্যান বর্ণমালায় 

জলের পাতায় বৈরাগী মাছ। 

 

 

কথোপকথন 

দর্পন কবির

 

পুরুষঃ

কী বলব, বলো? আজকাল কী হয়েছে

খুঁজে পাই না দু’চোখের জলও! 

ওই জল নাকি অব্যক্ত কবিতার ভাবার্থ হতে

কবিদের অনুভবে রক্ত পলাশ হয়েছে, কেউ বলছে

তোমাদের বাড়ির সামনে দমকা হাওয়া হয়ে হামলে পড়ছে। 

চোখ আমাকে বলে, অতল সমুদ্র ধরে আছে,

শুধু ঢেউ নেই, ভাষা নেই, অদ্ভুত মৌণতা সমুদ্রজলে।

তাহলে মৌণতাই থাক, তোমার স্পর্শ নিয়ে

চোখের জল ভাষা ফিরে পাক। 

 

নারীঃ

ছুঁয়ে দিলেই যদি হয় তোমার চোখের জলের শাপমোচন, 

দেব না হয়। যদি পূর্ণিমার রাত হয়ে সামনে আসো,

কুসুম ভোরের পদাবলী তুলে দেব। সকালে এলে

ফুল ফুটানোর গান, দুপুরে এলে রোদের জৌলুস, বিকেলে

এলে দেব বসন্তের স্বরলিপি, আর সন্ধ্যায় এলে জোনাকি আলোর উৎসব। জানো তো, চোখের জল ভাষামূক হলেও মরুভূমি হতেচায় না কখনও। অনুরাগের শীতলপাটিতে বিছিয়ে দেব যেই, দেখবে চোখের জল সমুদ্র হয়ে ভাসাবে তোমাকেই।

 

 

অরণ্য 

নিলয় গোস্বামী

 

প্রতিটি অরণ্য আলো খুঁজে ফেরে 

পাতাদের বুকে,

বিদীর্ণ সন্ধ্যার গায়ে, ছুঁয়েছে তুলতুলে অভিমান।

 

নরম কাশফুলে থাকে কিছু মৌলিক পুনরাবৃত্তি।

রাতের হাসিতে কেউ ছিটিয়ে দেয় নীল ব্যঞ্জনা।

 

দিনের স্বপ্ন ছিনিয়ে  নিয়ে যায়

ক্ষুধার্ত গোধূলি

এভাবেই সময়ের হারিয়ে যাওয়ায়  চোখ রাঙায় 

মোহহীন অতল।

 

কতো মিতাদের পথ ডুবে গেছে ভাঙা আয়না হয়ে।

চুপকথা আজ চিৎকারে  

যে অনুপ্রাস বিলিয়ে যায় 

তার ভিন্নমুখী হয়ে সংযত আঁচল লজ্জা আঁকে।

 

ভোরের নামাবলিতে জোছনার মন খুলে রাখি

 

বাতাসের ফুসফুসে যে রোদের হৃদয় লুকিয়েছে,

তারই ছলাকলাকে  আমার বিশ্বাসে ধুয়ে দেই

তোমার ধমনিতেই মিশিয়ে দিলাম আজ 

আমার  বাঁধভাঙা দীর্ঘশ্বাস।

 

 

 

ঘৃণাত্মক জানালার শাখায় কারা

রহিত ঘোষাল

 

গাং কইতর পরিক্রমা করে নিরুদ্বেগ জপমালা।

টোস্ট বিস্কুটে উপচানো ক্ষুধার মড়ক,

বদলে যাচ্ছে ভেজা ভেজা সব সলিল মরুভূমি, 

শিহরণ এসে বসে ম্লান ঘৃণাত্মক জানালার শাখায়।

 

ধুলোর ফেনিল প্রতিজ্ঞা সুহাসকন্যার কাছে জানতে চায় রাঙ্গামাটির মানচিত্র পেড়িয়ে যে দেশ সেখানে উলুরধ্বনি দিচ্ছে কারা?

 

বাজিমাত করার মতো বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠে,

সমতল ভূমির পলকে পলকে ওড়ে,'ইস্কাবন' মুনাফা করে 

থিতু ছাতার তলে।

কার্নিশ থেকে ঝোলে আলীবর্দী খাঁ।

 

 

 

ব্যস্ততা 

দেওয়ান নাসের রাজা 

 

শীতের আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা 

পাহাড়ি বনের পথ গেছে বহুদূর 

ফুলের কুঁড়িরা আরও নবীন সতেজ 

দূরের পাহাড় মায়াবী সবুজে আঁকা।  

 

চন্দ্রমল্লিকার পাতায় শিশির বিন্দু 

ক্রমশ সূর্যের আলো কিছুটা প্রখর 

মমতায় পরে আছি পুরাতন শার্ট- 

বাসের হাতলে ধরে যেতে হয় কাজে।  

 

চন্দ্রমল্লিকায় আছে শিশিরের ছোঁয়া 

ব্যস্ততা ও কাজ তাই একঘেয়ে লাগে। 

 

 

 

শীতোষ্ণবলয়ের গুঞ্জন

আশরাফুল কবীর

 

অনেক আলোর রোশনাই!

আমি খুব বেশি আলো দেখিনি সুপ্রিয়া

শুধুমাত্র ধূসর ছায়াদের ম্রিয়মাণ রূপ দেখে

আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করেছি।

 

যদি রাত্রি জেগে উঠে পথ দেখায় কালিন্দীর; তবে

দোলপূর্ণিমায় আমি ঠিক খুঁজে নেবো ছিপছিপে,

দোলনশীল এক কোশা -

 

দোফসলি জমিতে যদি হয় গ্রীষ্মের তাণ্ডব

তবে তমালের ছায়ায় আমি আঁকড়ে ধরব

অটল বিশ্বাসের ধ্রুবরেখা।

 

আক্ষেপে যদি পুড়তে থাকে বিশ্বাসের সমাধি

অনুকরণে খুঁজে নেব আরেকটি ক্রৌঞ্চদ্বীপ;

মায়ায় ভরা তা হবে কি না তা জানি না।

 

যদি রাতের অধিবেশনেই শেষ হয় অনুচ্ছেদ

ঘর্মাক্ত কলেবরে উল্টে যেতে থাকে অজস্র পৃষ্ঠা

তবে তাই যেন হয় বর্ণালী উষ্ণ প্রস্রবণ -

 

উজানে থাকবে তুমি, ফুটনোটে আমি ও

শীতোষ্ণ-বলয়ের গুঞ্জন।

 

 

আত্মজ

নূরজাহান শিল্পী

 

খণ্ড খণ্ড মেঘ আকাশে। ধরিত্রীর পায়ে যেন কেউ শেকল পরিয়ে দিয়েছে। বিষাদের ভাঁজে ভাঁজে বাঁচার আকুতি।

জীবনের ধারাপাত বদলে গেছে। চেনা পৃথিবী ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে।মৃতের শহরে মেঘগুলো ঘুরছে চক্রাকারে।

 

সারা রাত জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবছে রায়হান। রাস্তার ওপাশে বিশাল বৃক্ষ আড়াল করে আছে যেন পৃথিবীর ছায়া।

মা বলেন, গাছটা উনার ও দ্বিগুণ বয়েসি। বাবা, বৃক্ষটা তোর মতো আমার আত্মজ। তোর  শৈশব কেটেছে এখানে ছায়ায়।খেয়াল রাখিস বাবা।

সুবেহ সাদেকের আলো ফুটতে শুরু করেছে ফ্যাকাশে পৃথিবীতে। পিনপিন নীরবতায় অদৃশ্যমান ভাইরাসের হুতাশন।

 

গতকাল মাকে শেষবারের মত খাইয়ে শার্টের কোনায় মায়ের ঠোঁটের কোণে গড়িয়ে পড়া জলটুকু মুছে দিয়ে এসেছিল রায়হান।মায়ের জন্য প্রার্থনায় বসতে হবে এই ভেবে উঠে দাঁড়াতেই মুঠোফোনের রিংটোন বেজে উঠল। কুইন মেরি হাসপাতাল থেকে ফোন।

আসছি বলে ফোনটা রেখে রায়হান তাকালো জানালার ওপাশে বৃক্ষটার দিকে, কিছুক্ষণের মধ্যেই মা আসবেন  চিরনিদ্রায় উনারআত্মজের ছায়ায়।