উত্তরের জনপদ
সবুজ পাতা
দূর থেকে দেখলাম তাহের এসে লোহার বেঞ্চে বসলো। বসার ধরন দেখে মনে হল আমাকে উনি দেখতে পায়নি। কিছুটা ইচ্ছা করেই কাছে গেলাম না, হয়তো মনমতো সময় কাটাতে এসেছে। ব্রিজের নীচের এই নিরিবিলি জায়গাটা আমার ভীষন পছন্দের। সামারের শুরুতে সদ্য গজানো পাতা নিয়ে গাছের শাখাগুলো বাতাসে দুলতে থাকে। কতোক্ষন ধরে বসে আছে তা জানে না তাহের। দুই ঘন্টা তো হবেই, দুপুরের রোদ মরে এসেছে। হাতের মুঠোয় একটা এনভেলপ ধরে রাখা যত্নের সাথে। তাহেরের দৃষ্টি সামনের পানির দিকে, মালবাহী বার্জ চলে যাচ্ছে পানির বুক চিরে।
উপরে ভেরেজ্যোনা ব্রিজের কংক্রিটে ধাতব শব্দ তুলে পার হচ্ছে যানবাহন। লবনাক্ত পানির ধারে বিকট শব্দ করে উড়ে বেড়াচ্ছে সীগাল, তাদের সাদা ফোলা পেট ঝিলিক দিচ্ছে বিকেলের আলোয়। অদূরে স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের ধোঁয়াটে সবুজ সীমারেখা ভেসে আছে। কিন্তু কোনদিকেই তাহেরের নজর আটকাচ্ছে না। আজকে তাহের অনেকটাই শান্ত-ধীর, তারপরেও কোন বিষয় স্থির ভাবে ভাবতে পারছে না। মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে নানান টুকরো কাহিনী। আমার দিকে চোখ পড়তেই উঠে এল তাহের, এনভেলপটা সামনে তুলে ধরলো। কিছু বোঝা ছাড়াই দেখলাম চোখে বাঁধ ভাঙ্গা পানি, বাচ্চা ছেলের মতো ফোঁপাতে লাগলো।
ভালো করে তাকিয়ে দেখি, সাদা খামের উপরে আমেরিকান সিটিজেনশিপ এবং ইমিগ্রেশন সার্ভিসের নীল রঙের সিল দেয়া। কান্না মাখানো কণ্ঠে তাহের বলল,
“আজ সকালেই চিঠিটা পেলাম, তারপর থেকে ঘোরের ভিতরে আছি। গ্রিনকার্ড হয়েছে আমার বিশ্বাস হয় না বুঝলেন।“যা বোঝার আমি বুঝে গেলাম, দীর্ঘ তেইশ বছর অপেক্ষার পর একজন মানুষ যখন বৈধতা পায় তখন বাকহীন হওয়া ছাড়া উপায় কি! বললাম,
“অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল, আজ থেকে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন। লম্বা লড়াই করেছেন, এখন মন খারাপ করবেন না তাহের ভাই।““এই বৈধতা দিয়ে আর কি হবে? আমার তো সব শেষ। জীবনের আসল সময়টুকু চলেই গেছে, একলা হয়ে গেছি। কাজের হয়রানিতে কখনো সুস্থির হয়ে বসতে পারিনি, এখন শরীরে অসুখ বাসা বেঁধেছে।
তাহের সিদ্দিকি, আমার ব্রুকলিনের বাসার প্রতিবেশী। বেশ অনেকদিন ধরেই চিনি, ছয় বছর আগে উনার স্ত্রী মারা গিয়েছে। একমাত্র ছেলে চাকরি পাবার পর ব্রুকলিন ডাউনটাউনে কিছু বন্ধুর সাথে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে। দুই বেড রুমের বাসায় তাহের এখন একলাই থাকেন। খুব একটা কারোর সাথে মেশেন না, তবে রাস্তায় দেখা হলে হেসে জিজ্ঞাসা করে কেমন আছি। এই তাহের সিদ্দিকির প্রবাসী গল্পটা আমার জানা। পঁচিশ বছর যাবত নিউইয়র্কে আছে। বিয়ের পর স্ত্রী’কে নিয়ে আমেরিকা ঘুরতে এসেছিল। তার স্ত্রী চার মাসের প্রেগন্যান্ট থাকায় ছেলেটা এদেশেই জন্মায়। তারপর আর দেশে ফেরা হয়নি, আমেরিকায় দিক-শুণ্যহীন ভাবে জীবন শুরু করেছিল।
একবছরের মাথায় স্ট্যাটাস হারিয়ে পাগলের মত দশা তখন। কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না তাহের, নানাজন নানান পরামর্শ দিয়েছিল। কন্ট্র্যাক্ট ম্যারেজ সম্ভব হয়নি কারণ তাহের বিবাহিত। আত্মীয়রা বলেছিল, দেশে ফিরে লাভ নেই, সম্পত্তি না থাকায় তেমন সুবিধা হবে না। শেষমেশ এক বাঙালি লইয়ার বলল,
“ভাই কষ্ট করে চালিয়ে যান, আপনার ছেলে আমেরিকান সিটিজেন। বাইশ বছর হলে ছেলেই এপ্ল্যাই করতে পারবে আপনাদের জন্যে। ওটার থেকে সহজ আর নিরাপদ কোন উপায় নেই।“তাহের সিদ্দিকি তাই-ই করল, বাঙ্গালি গ্রোসারিতে কাজ নিয়ে ইনকাম শুরু হল। ছেলেকে স্কুলে দেবার পর তাহেরের স্ত্রী’ও কাজ শুরু করল ডানকিন ডোনাটস-এ। কাজের অনুমতি না থাকায় কেউ-ই তাদেরকে ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে চায়নি। আই আর এস’র কাছে রিপোর্টের ভয়ে এরাও চুপ থেকেছে, মুখ বুজে সহ্য করেছে সব। তাহেরদের কোন উৎসব উদ-যাপনের দিন ছিলোনা, আবহাওয়া খারাপের বিষয় ছিল না, এমন কি শরীর খারাপের কথাও কেও বলতে পারত না। যদি কাজ চলে যায় এই ভয়ে কেটে গেছে বছরের পর বছর। তবে একটা ভালো দিক ছিল তাহের দম্পতির, তারা দুজনে মিলে সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি করত।
ছেলেকে নিয়ে উইকেন্ডের সকালেই বেরিয়ে পড়ত দুজনে। ম্যানহাটানের মিউজিয়াম, পার্ক, শহরের নান্দনিক জায়গা ঘুরত, কখনও বাইরে খেতো। নিজেদের প্রাইভেট কার না থাকায় ট্রেনে করেই অন্য স্টেটে বেড়াতে যেত। জীবনের অনেক স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেলেও কোথায় যেন একটা সুখের ছন্দ ছিল। কিন্তু হঠাত করে তাহেরের স্ত্রী ওভারিয়ান ক্যান্সারে মারা গেলে সেই সুখের প্রদীপটাও দপ করে নিভে যায়। জীবন চলার পথে তাহের একলা হয়ে পড়ে। স্ত্রী মারা যাবার পর ছেলেটা কলেজ শুরু করলো এক সময়। এদেশের বাচ্চারা এই বয়েসে এসে বাবা-মা’র সাথে আর তেমন ঘনিষ্ঠতা রাখতে চায় না। ইচ্ছে করেই তারা দুরের ভার্সিটিগুলোতে এডমিশন নিয়ে চলে যায়। পঞ্চাশের কোটা পার করা তাহের সিদ্দিকি চারপাশ থেকে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিল।
দীর্ঘ অদেখায় তাহেরের কাছে দেশ একটা অজানা ভূখণ্ড হয়ে যায় একদিন। প্রায়ই কারোর মারা যাবার খবর আসে, ভাইবোনদের বিয়ের খবর আসে ছবিসহ। কখনো শুনতো গ্রামের জমি বেচা হয়েছে, গাছ কেটে ফেলেছে, কোথাও রাস্তা পাকা হয়েছে। কিন্তু তাহের সেই পরিবর্তনের কিছু অনুধাবন করতে পারে না। ফেলে আসার সময় যে চিত্র তার মনে গেঁথে ছিল সেটাই ঘুরেফিরে চোখে ভাসে। সাদাদের দেশে মন না চাইলেও প্রতিনিয়ত মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে চলেছে। তবুও শিবসা নদীর ধারের পাইকগাছা শহরটা কুয়াশার মতো আবছা হতে হতেও শেষমেশ অদৃশ্য হতে পারেনি।
মা চলে যাবার খবরটা তাহের পেয়েছিল কাজের মধ্যে। আচমকাই দেশ থেকে দুপুরে ফোন এসেছিল, ম্যানেজার ওইদিন সদয় হয়ে ছূটি দিল। ইস্ট নদীর পাড়ে বসে অনেক কেঁদেছিল তাহের, সেদিনের কান্নায় শুধু মা হারানোর ব্যথা ছিল না। অপ্রাপ্তির যে কষ্টগুলো তাহেরের মন জুড়ে থাকতো সেগুলো যেন লোনা পানি হয়ে মিশেছিল মাটিতে। এসব পুরনো কথা তুলে তাহের বিলাপ করছিল, আমি উপায়ান্তর না দেখে চুপ করে ছিলাম। আচমকা গাড়ির হর্ন শুনে দুজনেই চমকে তাকালাম, তাহেরের ছেলে এসেছে।
“আব্বু, উঠে আস, আজ আমরা সেলিব্রেট করবো।“আমাকে বিদায় জানিয়ে তাহের উঠে গেল ছেলের গাড়িতে। আজ ফ্রাইডে নাইট, জম্পেশ একটা ডিনার হবে হয়তোবা। বেল্ট পার্কওয়ে ধরে গাড়ি ছুটছে, জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টের কাছে আসতেই রাজকীয় প্লেনগুলো নজরে এলো। গর্বিত ভঙ্গিতে লেজ উঁচিয়ে রাজহাঁসের মতো দাঁড়িয়ে আছে রানওয়েতে। জানালার কাঁচে মুখ ঠেকিয়ে সে দৃশ্য দেখে তাহের সিদ্দিকি। আজ আর প্লেনগুলোতে চড়ে বসতে ইচ্ছা করে না। অথচ দশ বছর আগেও এখান দিয়ে যাবার সময় আপন মনে বিড়বিড় করে উঠতো,
“ও প্লেন, আমার সোনা প্লেন, আমারে নিয়ে যাও মা’র কাছে, শিবসা নদীর ধারে। কতো জনরে পেটের মধ্যে নিয়ে উড়াল দিলে তুমি, শুধু নিলে না আমারে।“
একটু আগের দেখা সেই পানির ধারা, যা পাগলের মতো মোহনার দিকে চলেছে। আটলান্টিক সাগরের সাথে মিলবে বলে কত দুরদুরান্ত থেকে ছুটে এসেছে। কিন্তু মোহনার কাছে এসেই থমকে দাড়ায় নদী, গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। এতোদিন যার অপেক্ষায় ছিল তাকে হাতের মুঠোয় পাবার পর এ কোন উদাসীনতা!
স্বপ্নের শহরে দুঃস্বপ্নের জীবন
নিম্মি নামের মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। মাঝ রাস্তায় বসে সমানে সিগারেট ফুকছে। সিগারেট টানা দেখে মনে হচ্ছে সে চেইন স্মোকার। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি কতদিন ধরে সিগারেট খাচ্ছ? সে তার হাতের সিগারেট জোরে করে একটা টান দিল। তারপর ধোয়ার কুন্ডলী ছাড়তে ছাড়তে বলল ,"দিনক্ষণ মনে নেই ,অনেকদিন হলো !"
ওর কথার সত্যতা পেলাম। লাল রঙের লিপস্টিকের আড়ালে কালো ঠোঁট বেহায়ার মতো উঁকি দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে তার দীর্ঘদিনের ধূমপানের তীব্র ইতিহাস! চোখের নিচের পুটলী তোলা ভারী চোখ বলে দিচ্ছে তার অশান্ত জীবনের কথা।
জ্যাকসন হাইটসে বাজার করতে গেলে কিংবা কখনো সাবওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকলে প্রায়ই ওকে দেখতাম। আটোসাটো শরীরের লম্বা উচ্চতার মেয়েটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। আর দশটা বাঙালি মেয়ের পাশে ও যেন বড়বেশী অন্যরকম। কখনো কারো দিকে তাকাতো না । নিজের ভেতরে নিমগ্ন এক ঋষি যেন! চুলগুলো ঘাড় সমান করে কাটা। শ্যামলা গায়ের রং, ভাসা এবং বড় দুটো চোখ। চোখ দুটিতে রাজ্যের ক্লান্তি খেলা করত। মুখে কখনোই কোনো মেকআপ করতে দেখিনি। খসখসে গায়ের চামড়া বলে দেয় কতখানি অযত্ন এবং অবিচার সে নিজের উপর করছে। লোকে বলাবলি করতো, ওকে নাকি প্রায়ই দেখা যায় মদ খেয়ে মাতাল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে।
একদিন জ্যাকসন হাইটসের এক পথ মেলায় ওকে দেখি। রীতিমতো শাড়ি চুড়ি গয়নার দোকান দিয়ে বসেছে। অনেকদিন ধরে ওর প্রতি আমার একটা কৌতুহল ছিল। সুযোগ খুঁজছিলাম কথা বলার। মেলা যেন আমাকে সে সুযোগটা করে দিল। শাড়ি কেনার উছিলায় নানাভাবে কথা এগিয়ে চলল, এক পর্যায়ে ও আমাকে বিজনেস কার্ড দিল। বিজনেস কার্ড এর সূত্র ধরে ওর সম্পর্কে ধীরে ধীরে সব জানতে পারি। নিম্মি নামের মেয়েটা (ছদ্মনাম) অল্প বয়সে স্বামীর হাত ধরে এদেশে এসেছিল। ওর স্বামী ছিল নিম্মির কৈশোরের খেলার সাথী।
পরে বন্ধু এবং ক্লাসমেট। কৈশোর-তারুণ্যের প্রেম ওদেরকে খুব দ্রুত নিয়ে যায় বিয়ের দিকে। কিন্তু পরিবারের কেউ এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। না ছেলের পক্ষ, না মেয়ের পক্ষ। দুজনে মিলে বাঁধে শান্তির নীড়, কেটে যাচ্ছিল হাসি আনন্দে দিনগুলি। কিন্তু ওদের মন চায় আরো কিছু করতে, দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে যাবে। কিন্তু কোন দেশে যাবে? ভেবেচিন্তে ঠিক করে আমেরিকায় যাবে। দুজনে মিলে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এপ্ল্যাই করে! মেধাবী থাকার কারণে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। নিজেদের যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে প্লেনের টিকিট কেটে এক রকম সবাইকে না জানিয়ে চলে আসে আমেরিকায়।
এখানে এসে প্রথমে পরিচিত এক বন্ধুর বাসায় ওঠে। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে নিজেরা একটা স্টুডিও রুম ভাড়া করে। ইতিমধ্যে ওদের চাকরি হয়ে যায়। ছোটখাটো জব, যেহেতু কাগজ নেই। এখানে শুরু হল বাস্তব জীবনের খেলা। স্বামী-স্ত্রী দুজনে প্রাণান্ত খাটা খাটনি করে যা আয় করত তার অধিকাংশ চলে যেত ঘর ভাড়ায়। বাকি টাকায় কোনরকমে খাওয়া চলতো। দিনান্তে ঘরে ফিরে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়তো। কোনরকম খাওয়া দাওয়া করে আবার পরের দিনের কাজে যাবার প্রস্তুতিতে ঘুমিয়ে পড়তো।
এভাবে চলতে গিয়ে ওদের ভালোবাসা কখন যে জানলা দিয়ে পালিয়ে গেছে নিম্মি টের পায়নি। যখন টের পেলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে! নাটাইয়ের সুতা অনেক দূরে চলে গেছে। সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা নিম্মির পক্ষে আর সম্ভব না। একদিন নিম্মিকে না বলে লোকটা কোথায় যেন চলে যায়। নিম্মি জানেনা! কাজ থেকে ফিরে এসে খাবার গরম করে টেবিলে নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু সূর্য ডুবে যায় ,রাতের আঁধার পেরিয়ে আর একটি সকাল হয়। সে আর ফিরে আসে না।
ওর কাজের জায়গায় গিয়ে খোঁজ নেয় কিন্তু না ওরাও বলতে পারে না। শুধু বলে কাজ থেকে ফিরে গিয়েছে সময়মতো। নিম্মি পাগলের মত খুঁজতে থাকে তার স্বামীকে। ৯১১ এ কল দেয়, পুলিশ সবকিছু শুনে খোঁজ করতে শুরু করে। সপ্তাহখানেক পরে খোঁজ পাওয়া যায় দূরের এক শহরে ওর স্বামী সংসার পেতেছে এক স্প্যানিশ মহিলা কে নিয়ে।
নিম্নির বুঝতে বাকি থাকে না বৈধ কাগজের জন্যই ওর স্বামীর এই নতুন সংসার। নিম্মির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! কি করবে সে জানে না! বাবা-মার কাছে ফোন করে জানাবে সে পথও খোলা নেই। এই পৃথিবীতে বড় একা হয়ে পড়ে সে। এ পর্যন্ত বলে নিম্মি থেমে যায়। বুঝতে পারি এরপরের কাহিনী অনেক কষ্টের। সে সময় নেয়স। হাতের সিগারেটে আরো কয়েকটা টান দেয়। সিগারেটের ধোঁয়া গুলো গোল গোল হয়ে উপরে ভেসে যায়। নিম্মি অপলোক তাকিয়ে থাকে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলীর দিকে। ওর চোখের দৃষ্টি বলে যায় কত না বলা কথার ব্যথা! কত স্বপ্নের অপমৃত্যুর কথা। আমার আর ইচ্ছে করে না সে জীবনের গ্লানিময় কথা শুনতে। আমাকে আবাক করে দিয়ে নিম্মি গুনগুন করে গেয়ে ওঠে..
“জীবন সে তো পদ্ম পাতায় শিশিরবিন্দু
মরুভূমির বুকে যেন বিষাদ সিন্ধু
মনরে সে জীবন নিয়ে কেন এত কান্না
জীবনের পায়ে দিলি কেন এতো ধর্না !!
এই জনপদে নিম্মিরা ভালো থাকুক। এই জনপদ নিম্মিদের ভালো থাকার উদাহরণ হোক, স্বপ্ন সফল হওয়ার পাথেয় হোক। নিম্মিদের স্বপ্ন ভঙ্গের বিষাক্ত বাতাসে বড্ড ভারী হয়ে আছে এ শহর।