https://www.bartomansylhet.com/

3829

sports

প্রকাশিত

০৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:০৭

আপডেট

৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

অটিজম সচেতনতা মাস এপ্রিল

2149E81D-6E3F-46CE-9C0B-87BF270C386Aআমরা সবাই সমান না 

মনজুর কাদের

 

কেউবা মোটা কেউবা চিকন

কেউবা আবার টলও খুব

কেউবা কালো কেউবা শাদা

কেউবা রাখে বলও খুব

 

আমার কথা যায় জড়িয়ে

বলছি কথা কষ্ট করে

কেউবা আবার বাকপটু খুব

সব কিছু কয় পষ্ট করে 

 

কেউবা লিখি বাম হাতেও

ডান হাতে কেউ লেখিই না 

কেউবা দেখি প্রখর খুবই

কেউবা চোখে দেখিই না

 

কেউ শরীরে তিলও রাখে 

কেউবা জনম্ চিহ্ন

কেউবা আবার খুব স্বাভাবিক

কেউবা খানিক ভিন্ন

 

কেউবা আবার সঞ্চয়ী খুব

কেউবা কিছু জমান না

এই জগতে আমরা সবাই

সকল দিকে সমান না 

 

তোমার মুখে যা রোচে না  

আমার পরম ভোগ্য তা 

এ সংসারে একেক জনের

একেক রকম যোগ্যতা। 

 

 

 

অটিজম 

মাহবুব শওকত 

 

ঝুমকির বয়স এখন পনেরো ছুঁই ছুঁই। 

প্রায় এক যুগেরও বেশি দেশবিদেশে ছুটাছুটি করে 

চয়ন আর মুনার দু'চোখে স্বাভাবিক ঘুম নেই।

 

ঝুমকির দেরিতে কথা বলা- স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছিল তারা 

জ্ঞানীয় বিকাশে বাধাগ্রস্ত সে, প্রথম যেদিন জানিয়েছিল ডাক্তার,

ঝুমকির বয়স তখন তিনের ও কম! 

জেনেছিল তারা সামাজিক আচরণে দুর্বলতা ও পারস্পরিক যোগাযোগে ঘাটতি নিয়েই সামনে এগোতে হবে শিশুটিকে;

ইংরেজি পরিভাষায় যে সঙ্কটটির নাম অটিজম। 

 

তবু, হাল ছাড়েনি তারা

এ দুর্গম পথ অনিবার্য জেনেও নব প্রত্যয়ে হৃদয়ের দরজা উন্মুক্ত করে পথ দেখিয়েছিল শিশুটিকে-আস্থা নিয়ে। 

 

চলছে ঝুমকির যাত্রাপথ ঝুঁকি নিয়ে, নিদ্রাহীন চয়ন আর মুনা তবু আশার আলোয় রোজ 

ধরো রাখে বুকে দীপ্তিময় প্রতিটি ভোর। 

 

 

 

বলতে দ্বিধা নেই

এইচ বি রিতা

 

বলতে দ্বিধা নেই, আমি নিউরোডাইভার্জেন্ট 

আমি কে, এটা তার একটা অংশ মাত্র, পরিচয় নয়। 

 

বলতে দ্বিধা নেই, আমি সামাজিক মিলনে লড়াই করি

চোখের সংকেতে যোগাযোগ করি, তবে আমার একটি 

অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি আছে, যা চিরসত্য 

আমার মস্তিষ্ক ভিন্নতায় কাজ করে, তবে অকার্যকর নয়। 

 

বলতে দ্বিধা নেই, আমি প্রায়শই পৃথিবীকে বুঝতে পারি না

কিন্তু আমি সূক্ষ্ম জিনিসে আলো ও সৌন্দর্য দেখতে পাই।

অনুভব প্রকাশে আমাকে সঙ্কটে পড়তে হয় 

কিন্তু আমার একটা সৃজনশীল মন আছে, যা স্পষ্ট। 

 

বলতে দ্বিধা নেই, নিরাপত্তার জন্য আমার একটি রুটিন এবং কাঠামো দরকার, 

কিন্তু আমি স্বতঃস্ফূর্ত এবং দুঃসাহসিক হতে পারি

নিজের চিন্তায় বিচ্ছিন্ন বা হারিয়ে যেতে পারি

কিন্তু আমার একটি সমৃদ্ধ অভ্যন্তরীণ জগত আছে যা 

চড়া দামেও কেনা যায় না।

 

আমার ভিন্নতা, পার্থক্যের জন্য, করুণা বা বিচার করবেন না! 

কারণ, আমি ভাঙা বা অসম্পূর্ণ কেউ নই,

আমি শুধু আমি, যে বেশ ঝরঝরে, স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল। 

 

 

 

ভালোবাসুন হৃদয়ের দরজা উন্মুক্ত করে 

শায়লা আজীম

 

তোমরা ভাবো 'বিশেষ' মানেই অক্ষমতা

আবেগ অনুভূতিহীন জড়পদার্থ

অথচ নিগূঢ় মমতায় আমি দেখি একজন সংগীত প্রেমী-নাহিয়ানকে

কী দারুণ দক্ষতায় সে খুঁটে খুঁটে বিশ্বের দরবারে বেছে 

নেয় শিল্পীদের কণ্ঠ শুনেই উপলদ্ধি করে প্রতিটি শিল্প ও শিল্পীর নাম।

 

'বিশেষ' মানেই 'চাহিদা' থেকে পৃথক কিছু নয়

'চাহিদা' কার না থাকে? 

আমি, তুমি, আমরা, তোমরা সবাই 'চাহিদা' নিয়েই বাঁচি।

 

তারা ভিন্ন নয়, তারা ভিন্নতা প্রকাশ করে

তারা এক নয়, তারা একাদিক মেধা-মননে ভাবনার

রং তুলিতে বিশ্বকে পরিকল্পনা করে

আমাদের 'চাহিদা' ব্যাপক, তাদের 'চাহিদা' সংক্ষিপ্ত।

 

ভালোবাসুন, হৃদয়ের দরজা উন্মুক্ত করুন

ইন্দ্রিয়ের বাইরে এসে তাদের দেখুন

যত্ন ও সহানুভূতিতে তাদের আলিঙ্গন করুন।

 

 

 

অভিন্ন সত্তা

ফারজানা ইয়াসমিন 

 

একই অঙ্গে বেঁধে যত্ন করে এনেছি যাকে,

আমার অভিন্ন সত্তা আমার শরীরেই জন্ম তার। 

হয়তো সে অন্য সবার মতো ধরাবাঁধা জীবনে নয়

তবে তার একটি অপরিপক্ক কোমল হৃদয় আছে। 

বোঝাতে পারে না, বলতে পারে না কোথায় তার ব্যথা 

তবুও বুঝে নিই তাকে, নিজের মতো করে। 

 

কেউ তুচ্ছ ভাবে, কেউ অবহেলায় দুরে সরিয়ে রাখে

ভেঙে পড়ি কখনো কখনো সমাজের বাঁকা চাহনিতে

তবু, বিশ্ব দেখাই তাকে আঙুল ছুঁয়ে

দ্বিধাহীনভাবে বাড়তে দিই আস্থা-ভালোবাসার সাথে। 

তার জন্য খুলে রাখি অবারিত সবুজ-ফুলের বাগান 

দেখাই হাঁটি হাঁটি পায়ে পথ চলার সরল রেখা। 

 

স্বাধীনতায় হেসে খেলা বেড়ে উঠুক প্রতিটি শিশু-কিশোর 

তারা ভিন্ন নয়, কেবল ভিন্নতায় বিশ্বকে দেখে 

তারা নিজ স্বতন্ত্রে মহিমান্বিত উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে

প্রকৃতির আলো পড়তে দাও তাদের গায়ে

তারা অভিন্ন হয়ে উঠুক এই পৃথিবীর বুকে।

 

 

 

 

অটিজমের সাথে বসবাস                         

রুপা খানম

 

অটিজম শিশু মানে আশীর্বাদ। অটিজম শিশু মানে প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত মনোযোগ, যত্ন ও শ্রম দিয়ে সন্তানের পাশে থাকা। একটি ছুটিহীন জীবন! অটিজম এক বা একাধিক আচরণগত বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ। 

 

কিছু অটিজম শিশু একটি শব্দও বলতে পারেনা, হাঁটতে পারে না এবং সামাজিকতায় চরম অক্ষমতা থাকে। বাইরে বেড়াতেযাওয়া, রেস্টুরেন্টে বা পার্কে নিয়ে যাওয়া-সেটা যেখানেই হোক সব জায়গাতেই তাদের মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর। চারপাশের সবকিছুকিভাবে সে নিবে, তা বোঝে উঠার ব্রেইন তৈরি হয় না। হয়তো ছোট একটি জিনিস তাকে বিরক্ত করছে, সেটা ভাষায় বলতে নাপেরে ব্রেইন আগুনের মত বিস্ফোরিত হয়। অনেক কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। এমনকি পরিবারের জন্য ফোনে কারোসাথে কথা বলাও অসম্ভব হয়ে পরে। সেই সন্তানগুলোর সব মোকাবেলা করার জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে হয় পরিবারের। 

 

এটি একটি ধৈর্য পরীক্ষা। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও  ক্লান্তিকর কাজ। বছরের পর বছর এর পিছনে কাজ করে সামান্য কিছুফলাফল পাওয়া যায়। আবার কখনো কখনো কিছুই পাওয়া যায় না। 

অটিজম শিশুকে শিখানোর জন্য বাস্তব চোখে দেখা ব্যবহারিক জিনিস ব্যবহার করতে হয়। কারণ কথা বলে তাদের বোঝানো কষ্টকর। অটিজম পরিবার অন্য কোন স্বাভাবিক বাচ্চার পরিবারের বাসায় যেতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ, অনেকস্বাভাবিক বাচ্চা জানে না বা বোঝে না অটিজম বাচ্চার অপারগতা। যখন ব্রেইন অতিরিক্ত চাপে এলোমেলো হয়ে রাগান্বিত হয়, তখন অনেক রকম সমস্যা সৃষ্টি করে এই শিশুরা। কখনো মেঝেতে শুয়ে পড়ে, কখনো অসহ্য চিৎকার করে। কোন খেলনাইতাদের আকৃষ্ট করে না। কারণ তারা জানে না কিভাবে সেটি ব্যবহার করবে। কখনো কখনো স্বাভাবিক বাচ্চা আড় চোখে তাদেরদিকে তাকায়। ভাবে, কেন তারা এমন করে মাটিতে পড়ে কাঁদছে? 

 

এসব সত্যিই পরিবারের জন্য দুঃখজনক। তাই মিশতে ভাল লাগে যেসব পরিবারের বাচ্চা একই সমস্যা অতিবাহিত করে। তারাবুঝতে পারে অটিজম সন্তানের সমস্যাগুলো। এই শিশুরা পরিবার হোম থেরাপি পায়, তাতে কিছু ঘন্টা সাহায্য হয়। প্রতি মাসেডাক্তার লেগেই থাকে। বাহিরের মানুষের সামনে অটিজম সন্তান সামলানো কঠিন এক পরীক্ষা। কখনো কখনো তাদের এলোমেলো আচরণ দেখে অন্য গ্রহের ভেবে, মানুষ চেয়ে থাকে। তখন লজ্জায় পড়তে হয়, কষ্ট হয়। মানুষ হয়ে অন্য মানুষ কেকৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে দেখছে! কিভাবে তাকে সবার কাছে স্বাভাবিক করা যাবে সেই চেষ্টা করেই অস্থির থাকে পরিবার। যাদের স্বাভাবিক বাচ্চা আছে, তাদের কোন ধারণাই নাই সারাদিন কিভাবে এই সব বাচ্চার জীবন কাটে। 

 

সত্যিই হৃদয় ভেঙ্গে যায় ওদের জন্য। ছোট একটা পৃথিবী হয়তো একাকি একটা রুম, হয়তো রুমের কোনো কোনে  তাদের অবস্থান। অটিজম একটি শিশু ভয়াবহতা সম্বন্ধে পার্থক্য বুঝে না। পরিবার থাকে আতঙ্কে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এমন ও হয়প্রচণ্ড শীতে মাঝেমাঝে দৌড়ে ঘরের দরজা খোলে রাস্তায় বের হয়ে যায়, পরনে থাকেনা শীতের কাপড় জুতা। তাকে ধরতেমা-বাবা দৌড়ে পিছনে যায়, নিজের পরনে কোন কাপড় বা  জুতার তোয়াক্কা না করেই। কোনো কোনো সময় এমন পরিস্থিতিও হয়, এই বুঝি দৌড়ে গাড়ির নিচে পড়ে গেল। চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসে ভয়াবহতার দৃশ্য ভেবে। এমনও হয়, ঘরের বাহির হয়েদৌঁড়াতে থাকে রাস্তার মাঝে দিয়ে। আশেপাশের লোকজন তা দেখে পুলিশ কল করে। এসব দৃশ্য সচরাচর ঘটে অটিজম শিশুদের পরিবারে। বাবা-মা না থাকলে কি হবে তাদের? এই ভাবনা আতঙ্কে ফেলে পরিবারকে। 

 

অটিজম শিশু হলে তার কি কি ভয়ংকর ধাপ প্রতিনিয়ত পার করতে হয়, তা বর্ণনা করেও শেষ করা যাবে না। সাত বছর বয়সের শিশুও বাথরুম করতে জানে না। ডাইপার বা পেন্টে মলমূত্র ত্যাগ করে। তাদের প্রতিনিয়ত পরিস্কার করা কঠিন একটি কাজ।অনেকে দাওয়াত দিতে চায় না যেহেতু অটিজম শিশুটি ঘরের মধ্যে দৌড়াঝাঁপ করে, শব্দ করে, একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি করে।তারা চুপ করে বসে থাকে না। সারা ঘরে হেঁটে বেড়ায় খাবার হাতে। তাদের শান্ত রাখতে পরিবার বাধ্য হয় এসব করতে দিতে।অনেক মা-বাবা বাচ্চা কে নিয়ে পার্কে যায়, বেঞ্চে বসে অন্যদের সাথে গল্প করে। এতে নিজেরাও কিছুটা স্বস্তি পায়।কিন্তু অটিজম শিশুর পরিবারের তা করার সুযোগ থাকে না, কারণ পার্কেও এই শিশুদের পরিচালিত করতে হয় কারো সাথে মিশতে বা বল হাতেনিয়ে খেলতে। সেক্ষেত্রেও অটিজম শিশুটির বিক্ষুব্ধ ব্রেইন ভয়ংকর আচরণ শুরু করে দেয়। স্বাভাবিক পরিবার তা দেখে কষ্টে নয় কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করেন, কেন ছেলে শব্দ করে? কেন সে খেলার বল নিয়ে খেলে না? কেন সে চিৎকার করে?  কেন সে অন্যদের মারতে যায় বা কামড় মারে?  তারা হয়তো মনে করেন, মা- বাবার অক্ষমতা তাই এ বাচ্চা স্বাভাবিক আচরণ করতে শিখে নাই। 

 

হৃদয় ভেঙ্গে যায় এইসব প্রশ্ন, আলাপে। অথচ অটিজম শিশুর পরিবার নিয়ে তারা ভাবে না, কি যায় তাদের জীবনে! এত প্রশ্ন সবার!  যে দিনরাত এসবের সাথে থাকে, তার কাছে কি এই প্রশ্নের কোন উত্তর আছে? 

সাধারণ মানুষ মনে করে অটিজম শিশু যখন কান্না করে হয়তো বাবা মা তাকে অত্যাচার করছে অথবা বাচ্চাটা পাগল।স্কুল থেকে প্রিন্সিপাল পরিবারকে কল করলেই ভয় শুরু হয়, হয়তো শিশুটি স্কুলে কাউকে মেরেছে বা কামড় দিয়েছে। অথবা, নিজেইনিজেকে অত্যাচার করছে। কোনো কোনো পরিবার হিমশিম খায় তাদের নিয়ে, কারণ এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই, শুধু কাজকরে যাওয়া। এভাবে বাড়তে থাকে দূরত্ব বাবা-মা দু'জনের মধ্যে অটিজম শিশুটিকে কেন্দ্র করে। দু'জন আর কখনোই এক সাথেহতে পারে না কোনো বিশেষ দিনে বা বিশেষ কোন পরিবেশে। 

 

যে শিশুটির জন্ম এক সময় আনন্দ আর স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল, সেই শিশুটির জন্যই সব আনন্দ আর স্বপ্ন পরিবর্তন হয়ে শুধুই উৎকণ্ঠা বাড়ে। ভবিষ্যৎ কি হবে-তা ভেবে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে বাবা এবং মা। কিভাবে একা নিজের জীবনকে পরিচালিতকরবে, সেই দুঃশ্চিন্তায় কাটে সময়। এক বছর বয়সে ধৈর্য রেখে আশা করা হয়, হয়তো দুই বছর হলে পরিবর্তন হবে। দুই বছরবয়সে মনে হয়, পাঁচ বছর বয়সে স্পেশাল স্কুলে গেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এ সমস্যা কোনদিন ঠিক হওয়ার না। আজীবনসমস্যা এই অটিজম সমস্যা। শুধু স্পেশাল কিছু শিক্ষায় স্বাভাবিক জীবনে অটিজম শিশুটির চলার পথ উপযোগী করা; যাএকটি মানুষ হিসাবে যথেষ্ট কিনা-হিসাব মিলানো কঠিন।