সরকার নিজেই স্বাধীনতার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে
বাংলাদেশে স্বাধীন চিন্তা ও মতপ্রকাশ এমনকি পেশাদার সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের তথ্য সংগ্রহ এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির মানুষের লেখা, কথা বলা ও মত প্রকাশের অধিকার হরণের ঘৃন্য ও জঘন্যতম আইনটি হলো ডিজিটেল আইন।
সরকার আইন করে মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা-নিরাপত্তার জন্য, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ প্রতিটি সরকার আইন করেছে, মানুষকে হয়রানি, অত্যাচার-নির্যাতন এমনকি প্রয়োজনে অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে খুন এবং হত্যা করা পর্যন্ত। একটা করা হয় আইন করে আইনের মাধ্যমে, আরেকটা করা হয় বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে।
৫৪ ধারার অপপ্রয়োগে নির্যাতন নিপীড়নের পর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তচিন্তা, মুক্তমনা নাগরিক এবং সাংবাদিকদের হয়রানির বিরুদ্ধে সমালোচনা, অভিযোগ ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ডিজিটেল আইন করা হয়। তথ্যমন্ত্রী ছিলেন হাসানুল হক ইনু। দেখা যায় আইনটি আরও জঘন্য ও হয়রানিমূলক। প্রতিবাদ উঠে আইনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবিরা আইনের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের দাবি তুলেন। সুনির্দিষ্ট ধারার উল্লেখ করে পরিবর্তনের জন্য লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক, আলোচনা হয়। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
মুক্তমনা-মুক্তচিন্তার মানুষ, সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। তখনই প্রথম আলোর তথ্য অনুসারে দেখা যায় ২০২০ সালে এই আইনের অধীনে মামলা হয়েছে ১৯৮টি। আসামী করা হয়েছে ৪৫৭ ব্যক্তিকে। তার মধ্যে ৪১টি মামলার আসামি ৭৫জন পেশাদার সাংবাদিক। তার আগে ২০১৯ সালে মামলা হয়েছে ৬৩টি। এবং দেখা গেছে বেশিরভাগ মামলা করা হয়েছে সরকারের ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা। কেবলমাত্র সরকারী দলের সাংসদরাই করেছেন ১৯টি মামলা।
লেখক মুশতাক আহমদ তখন ১০ মাস ধরে কারাগারে আটক। ডিজিটেল আইনে দন্ড প্রদানের নীতি নেই। একজন আসামীকে কতদিন আটক রাখা যাবে তার সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই। ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোট দিতে হবে। প্রয়োজনে আদালতের অনুমতিক্রমে আরও ১৫দিন নিতে পারেন। ৭৫ দিন পর তাদের আর করার থাকবে না। এরপর এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের। তার বেশি নয়। তারপর মুশতাকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে একবছর পর ১১ জানুয়ারী। দেওয়ার কথা ছিল আগের বছরের ২০ জুলাই। মামলা জামিনযোগ্য। মুশতাক ৬ বার জামিন চেয়েও জামিন পাননি। যে ছয়জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়, তাদের পাচজনই বলেছেন তারা কিছু জানেন না। তারা পুলিশের কাছে কখনো কোনোও সাক্ষ্য দেননি।
তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেসব ভেক ও ভূয়া অভিযোগ। জাতির জনকের বিরুদ্ধে প্রচারণার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কি অপপ্রচার বলা হয়নি। এছাড়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাও গোলমেলে। রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়। লেখালেখির কারণে একজন সুস্থ্য সবল মানুষ ১০ মাস জেলে আটক থেকে মারা গেলেন। এটাকে কোনোও ভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে নেওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। র্যাব ও পুলিশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডতো স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। অতিসম্প্রতি র্যাব সুলতানা জেসমিন নামের একজন মহিলাকে বিনা মামলায় তুলে নিয়ে আটক অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে।
স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ যে কমে গেছে মহামারীর সময় তা আরও স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়েছে। নি¤œমানের স্বাস্থ্য কীট সরবরাহ, চিকিৎসক নার্সদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে না, কথা বলা যাবে না। কথা বলায় চাকরি হারাতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা বেহাল হচ্ছে, অভিযোগ স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে। তথ্যে গোলমাল হচ্ছে। দেখাটা সমান। কিন্তু বলতে-লিখতে দ্বিধা। সত্য প্রকাশের ইচ্চা নেই এমন কথা বলা যায় না। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। অসহায় সাংবাদমাধ্যমের বড় অংশই। বিপরীত ¯্রােতে গেলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হুমকি শুনতে হয়। করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে সংবাদ প্রকাশ এবং ত্রাণ ও অন্যান্য অনুদান নিয়ে দুর্নীতি তুলে ধরায় ১১ সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়। নরশিংদিতে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সুনামগঞ্জে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরায় স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। সরকার স্রেফ প্রতিশোধস্পৃহা থেকে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে একের পর এক মামলা করেছে। দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরায় প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্থা ও মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা এখনও ঝুলে আছে। একে যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না বলা যায় তাহলে কী বলা হবে?
সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে সরকার কিছু আইন করে থাকে। তার মধ্যে ৫৪ ধারা ও তথপ্রযুক্তি অইন বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ধারাগুলো সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের কথা থাকলেও লক্ষ করার বিষয় দু’টি আইনই বেশির ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে অপপ্রয়োগ হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকার ও অসৎ পুলিশ, সরকারী কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিবাজ সরকার দলীয়রা প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ কতে ঢালাও ভাবে দু’টি আইনেরই অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ডিজিটেল আইন চরম ভাবে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রয়োগ হচ্ছে। বড় দাগে বললে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করে রাখা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারী এবং যুব মহিলা লীগের পাপিয়ার অনৈতিক সাম্রাজ্যের গোপন তথ্য তুলে ধরায় সরকার দলীয় অনেকের যোগসূত্র প্রকাশ পাওয়ায় এক পর্যায় সাদা পোশাকধারীরা হাতিরপুল পরিমঞ্জিল তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এক মাস পর বেনাপুল সীমান্তে বর্ডার অতিক্রম করার অভিযোগ দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আজও শফিক জেলে আছেন।
এছাড়া সংখ্যালঘু শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ডিজিটেল আইনের শিকার হচ্ছেন। ব্রাম্মণ বাড়িয়ার রসরাজ, শাল্লার ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে আজও মিথ্যা মামলা ঝুলে আছে। ঝুমন দাসের মুক্তির জন্য দেশব্যাপী দাবি উঠলে সরকার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আসামীদের জেলের বাইরে আর নিরপরাধ ঝুমন দাসকে রাখা হয় জেলের অভ্যন্তরে।
গণতন্ত্রে স্বাধীন গণমাধ্যমে সজীব ও নির্ভীক মত প্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য। অথচ গণমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশে ক্ষমতাসীনদের অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ সমাজের প্রতি সংবাদমাধমের দায়বদ্ধতা আজ চরম হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে মত প্রকাশের বিরুদ্ধে সরকারের কর্তৃত্ববাদী একনায়ক ভূমি আবারও স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রথম আলো কী ভুল করেছে, একজন লেখক হিসেবে আমার কাছে তা স্পষ্ট নয়। ফটোকার্ডে কয়টি উপাদান যুক্ত হয়েছে, তাতে দিনমজুর জাকিরের উক্তি, একটি শিশুর পেছনের ছবি, গোলাপ ফুল, গ্রিল, তালা, স্মৃতিসৌধ, রাস্তা, গাছপালা সবই চমৎকার দৃশ্যমান মনে হয়েছে। আমাকে এগুলো ক্ষুব্ধ করেনি। বরং তাড়িত করেছে শিশুদের জন্য ভাবনা।
’পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করমু। বাজারে গেলে ঘুম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’। বক্তা, বক্তব্য একজন দিনমজুর জাকিরের, অত্যন্ত স্পষ্ট। বাড়ি সাভার। শিশুর ছবির সঙ্গে দিনমজুরের বক্তব্য মিলিয়ে পড়ার কোন সুযোগ নেই বা দেখিনা। এর সাথে স্বাধীনতার মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার কোন কারণও দেখিনা। বরং স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আরও স্পষ্ট করে বললে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সরকার একনাগাড়ে ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়া সত্বে দারিদ্র ও বৈষম্য বেড়েছে তা কি অস্বীকার করা যাবে? স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান দাবি এবং প্রত্যাশা ছিল মোটা কাপড়, মোটা ভাত। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও যদি সেটা পূরণ না হয় দারিদ্র ও বৈষম্যের উৎপীড়নে জর্জরিত হতে হয়, দুঃখ,অভিমান, ক্ষোভ, অভিযোগ বলার জন্য ২৬ মার্চই তো জুতসই সময় বা ক্ষণ। এতে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর আঁতে লাগতে পারে, তাই বলে বলাটা মোটেও অযৌক্তিক অন্যায় বা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। এসব কি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী নয়?
বাংলাদেশের ভাবমুর্তি কে নষ্ট করছে? সত্যি বলতে গেলে সরকার নিজেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী। মুক্তিযুদ্ধের দাবি ছিল একমুখি শিক্ষা, সেখানে আজ তিনমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করে একটি বিদ্বেষ ও সাংঘর্ষিক সমাজ তৈরি করা হচ্ছে। যা ইতিমধ্যে সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটা শুরু হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে আপোস করা হয়েছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না, হিন্দুর রচিত বলে অবজ্ঞা করা হয়। জাতীয় পতাকা উড্ডীন হয় না। বাহাত্তরের সংবিধান আদালত পুনর্বহালের রায় দিলেও সরকার বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছে। জাতির পিতার ভাস্কর্য খুচিয়ে খুঁচিয়ে ভাঙলেও সরকার মৌলবাদের সাথে আপস করে। এসব ঘটনা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী নয় কি?
প্রথম আলোর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল করার একটি অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামনকে সাভারের বাসা থেকে তুলে নেয়। মন্ত্রীরা একের পর এক বিবৃতি দিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, তথাকথিত বিশিষ্টজন যাদেরকে সরকারের তল্পীবাহক হয়ে চাটুকারীতায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়. জনগণের কোন দাবির ক্ষেত্রে সরব হতে দেখা যায় না, তাদেরকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জানের নামে মামলাও হয়েছে। সবই হয়েছে স্বাধীনতার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ তুলে। সরকার কোনোও প্রকার বাকস্বাধীনতা সহ্য করতে পারছে না। ভাস্কর্য দেখলেও ভয় পায়। সম্প্রতি বাকস্বাধীনতার দাবিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের একটি ভাস্কর্য বসালে বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে দিয়ে সেটিকে নির্লজ্জভাবে সরিয়ে ফেলা হয়।
ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার এমন কথিত অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দেওয়াটা সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতিফলন। বিশে^র গণতান্ত্রিক কোনো দেশে ’ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন’ নামীয় কোনো অপরাধ নেই। আফগানিস্তান, ইরান, সৌদি আরব রুয়ান্ডাসহ গণতন্ত্রহীন এসব দেশে প্রচন্ডভাবে কর্তৃত্ববাদী সরকার চালু আছে- এমন সব দেশে এ ধরনের অভিযোগ এনে নসাগরিকদের ওপর নিপীড়ন ও হয়রানি চালানো হয়।
আসলে কি জানেন, কোনও সরকার যখন কর্তৃত্ববাদী শাসন শোষণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একনায়ক হয়ে যায, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুলিশ, প্রশাসন, আমলা ও সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণকে শত্রু বিবেচনা করে, জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য নানা নির্যাতনমূলক ও নিবর্তনমূলক আইন করে। ডিজিটেল আইনটি সেরকমই একটি আইন। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অনেকের অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো- এত নির্যাতন ও নিবর্তনমূলক অপশাসনের পরও প্রথম আলোই সরকারের সমালোচনা এবং অন্যায় অপকর্ম তুলে ধরে থাকে। এখানেই প্রথম আলো ও সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে সরকারের বিরোধ। শুনেছি এজন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০টি মামলা ঝুলে আছে প্রথম আলো ও সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাই হেনস্থা ও নাস্তানাবুদ করার লক্ষ্যে এবারের মামলাটিও একই উদ্দেশ্যমূলক অপকৌশল ও পরিকল্পনার অংশ।
সে কারণে ইতিমধ্যে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিটি, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনেল, বিশ^জুড়া মানবধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবিতে কানাডা ভিত্তিক ১১৩টি সংস্থা ও বৈশি^ক নেটওয়ার্ক অবিলম্বে প্রথম আলো সহ সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং একই সাথে নিবর্তনমূলক ডিজিটেল আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
আশা করি, এ ধরনের নিপীড়নমূলক পরিস্থিতি থেকে দেশ শিগগিরই মুক্তি পাবে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যত দিন থাকবে, তত দিন এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাকস্বাধীনতার পরিস্থিতিও থাকবে না। কারণ, এই আইনে মধ্যযুগীয় বিচারব্যবস্থার একটা প্রতিফলন আছে। এ কারণেই উদ্ভট ও অযৌক্তিক এই আইন বাতিল করা উচিত।