https://www.bartomansylhet.com/

3797

international

প্রকাশিত

০৬ এপ্রিল ২০২৩ ১২:০৫

আপডেট

৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

মাছ, মাংস ও ভাতের স্বাধীনতা এবং গলা চেপে ধরা ডিজিটাল নিরাপত্তা 

aeou2di1একজন দিনমজুর জাকির হোসেন। দিন আনেন দিন খান। গরীব গুইন্ন্যা মানুষ। অভাব অনটনই তার জীবন। দুইবেলার খাওয়ার জোগাড়ের ভোঁ চক্করেই তার দিন কাটে। এটি বাংলাদেশের হাজার হাজার দিনমজুর ও নিম্নবিত্তের জীবন চিত্র।    দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যে আগুন লেগেছে। রোজার মাসে মানুষের বাজারে ঢুকে মুখ পুড়িয়ে বেরিয়ে আসার ছবি টিভিতে দেখাচ্ছে। সাধারণ মধ্যবিত্তদের হতাশা আর ক্ষোভের সবাক ছবি টিভির পর্দায় ভাসছে দিনরাত। মানুষের অভিযোগের আঙুল সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের দিকে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া ছাড়া কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হদিস পাওয়া যায় না।   কিন্তু দিনমজুর জাকির হোসেন যখন বলেন, "পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।" এই কথাগুলো দিয়ে প্রথমআলো পত্রিকার সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস প্রতিবেদন করার পর হঠাৎ করে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রক সরকার ও আমলা বাহিনী "স্বাধীনতার অপমান" করার অভিযোগ নিয়ে হামলে পড়ে পুরো দেশবাসীকে সচকিত করে দিয়েছে। শামসকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে এবং প্রথমআলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে বিষয়টিকে অনেক বড় ইস্যু করে ফেলা হলো।    সরকারের এই মারমুখী আচরণ দেখে বেচারি জাকির হোসেন হয়তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খিদে গিলে ফেলে নির্বাক হয়ে গেছেন। জাকির হোসেন হয়তো জানেন না যে, ক্ষুধার কথা, স্বাধীনতার কথা তিনিই প্রথম বলেন নি। আমাদের একজন কবি রফিক আজাদ হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, "ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।" চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গেছে অনাহারে। আমিও দেখেছি সেই দুর্ভিক্ষ। কবি রফিক আজাদ তখন তোলপাড়কারী এই কবিতাটি লেখেন। জাকির হোসেনের কথা শামসুজ্জামান শামসের হাত ধরে এমন তোলপাড় হবে তা কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন?   ক্ষুধার্ত মানুষ স্রষ্টাকেও গালি দেয়। দেশকে গালি দেয়। সরকারকে গালি দেয়। কষ্ট থেকে, দুঃখ পেয়ে গালি দেয়। কে না জানে "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।" একজন সাধারণ দিনমজুরের ভাত, মাছ ও মাংসের স্বাধীনতা চাওয়াতে বাংলাদেশের "স্বাধীনতার অপমান" কোথায় হলো? স্বাধীনতা কি এতোই ঠুনকো যে একজন দিনমজুরের মুখের কথায় তা খানখান হয়ে যাবে? জাকির হোসেনের ক্ষোভে উচ্চারিত কথাগুলো দেশবাসীকে জানানোটা কি করে "দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র" হলো যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনে শামসুজ্জামানকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যেতে হবে? তাহলে দেশের মানুষ কোন কষ্টের কথা ,দুঃখের কথা জানাতে পারবে না? জনগণের কষ্টের কথা তুলে ধরার জন্য শামসুজ্জামানকে যেখানে পুরস্কৃত করার কথা সেখানে তাকে "দেশদ্রোহী" বলে জেলে পোরাটা সম্পূর্ণই সরকারের অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। সরকারের ভেতরে দেশের অভ্যন্তরে ফুঁসে উঠতে থাকা জনরোষ নিয়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছে বলেই বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিতে হচ্ছে।   IMG_3415IMG_3413সবচেয়ে বড়ো মজার দৃশ্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভুলে ভরা বিজ্ঞপ্তি এবং ক্ষমতার ছায়াতলে বসে নাদুসনুদুস হয়ে ওঠা বুদ্ধিজীবীমহল ও কৌলিন্যবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের দ্রুততম গতিতে দানের প্রতিদান দিতে এগিয়ে আসার আকুলিবিকুলি অবস্থা। এদের কারোরই জীবন জাকির হোসেনের ক্ষুধাকাতর জীবনের সমান নয়। লক্ষকোটি জাকির হোসেনদের জীবন জীবিকার দুর্দশার কথা  বলতে না দেয়ার জন্য আছে টুঁটি চেপে ধরার কালাকানুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকার যখন সেই কালাকানুন দিয়ে টুঁটি চেপে ধরেছে তখন জ্ঞানপাপী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও কৌলিন্য পূজারী সংস্কৃতির অধিকর্তারা ছুটে এসেছেন টুঁটি চেপে ধরাকে জায়েজ করতে। জোর গলায় সদাশয় মালিককে নিশ্চিত করতে চাইছেন নিজেদের পদলেহী অবস্থান।    বিষয়টি কাকতালীয় কিছু নয়। আসলে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এতোদিন যাদের হালুয়ারুটি দিয়ে লালনপালন করেছে তাদের জড়ো করছে আওয়ামী লীগ। এখন আওয়ামী লীগ প্রতিদান চাইছে। বাঙালির সংস্কৃতির উপর আধিপত্য বিস্তারকারী কৌলিন্যবাদীরা একে একে উচ্ছিষ্টের প্রতিদান দিতে গলা ফোলাতে শুরু করেছে। ৫০ জন বুদ্ধিজীবীর দেয়া বিবৃতিতে যাদের নাম আছে তারা সবাই আওয়ামী দানাপানি খেয়ে নিজেদের তরতাজা করেছে। এরা ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন নি, দেশব্যাপী সংখ্যালঘু নিধনের বিরুদ্ধে আওয়াজ করেন নি, রাজাকারদের নিধনের কৌশলের পাশাপাশি আরেক মৌলবাদের সাথে ক্ষমতার আঁতাতের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেন নি, ব্যাংক থেকে লক্ষকোটি টাকা  লোপাট ও সোনারবার লোহা হয়ে যাবার ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে অথচ তারা যেনো কিছুই জানেন না। অথচ একজন দিনমজুরের ভাত মাছ আর চাউলের স্বাধীনতা চাওয়াতে তাদের গায়ে ফোসকা পড়ে গেলো?  সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নামক মেকি ও কৌলিন্যবাদী সংগঠনটিও একই কায়দায় হালুয়ারুটির প্রতিদান দিতে নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরিতে আওয়ামী লীগের সহায়ক হয়ে চিৎকার শুরু করেছে। সমাজকে আশরাফ-আতরাফে বিভক্তকারী এসব কৌলিন্যবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে চিৎকার করতে শুরু করেছে। এরা সামরিক স্বৈরাচারের বিরোধিতার নাটক করে ( দুঃখজনক সত্য হলো সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় এই সংগঠনের কার্যক্রমকে প্রচন্ড সমর্থন করতাম- তখন অন্ধ ছিলাম, মিথ্যা আবেগতাড়িত ছিলাম) ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে সিভিল স্বৈরাচারের লেজুড়বৃত্তিক করে আখের গুছিয়ে এখন শক্তিমত্তা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছেন।   আমরা কি এঁদের ধিক্কার দেবো, ঘৃণা প্রকাশ করবো নাকি নিন্দা জানাবো?