https://www.bartomansylhet.com/

3747

politics

প্রকাশিত

০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৮

আপডেট

৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

উত্তরের সাহিত্য 

উত্তরের সাহিত্য ১(5)কাজী আতীক এর কবিতা

আগত অজানায়

 

এক বিষবাষ্প প্রচ্ছায়া ঘিরে আছে ঘর

ঘর! এক অমীমাংসিত অভিলাষ আনন্দ বেদনার,

যদি এক অদৃশ্য কালো হাত বিপুল মেলেছে থাবা

বিবর্ণ পলাতকা সময়ের গর্ভে জন্ম নিচ্ছে নিত্যদিন

জাতক ড্রাগন, যার আগুনে নিশ্বাস- লোলুপ জিহ্বা,

 

এক অনিশ্চিত অবয়ব পরিস্ফুট ক্রমশ-

আগামীর প্রতিদিন এক নষ্ট পরাগায়ন সময়ের

জাতক প্রহর এক  অজানা সংক্রমণ আতংক যেমন,

 

অতঃপর আগত অজানায় ভীষন বিচলিত অনুভব

সীমিত বিকল্প যদি? কিভাবে তখোন শোভন প্রাক্কলন?

 

আপাত অনায়াসে

 

আত্মশ্লাঘার অনুরূপ অভিব্যক্তি ভঙ্গিমায়

সে বসেছিলো নিমগ্ন আপাত অনায়াসে

অথচ বিষণ্ণ ছুঁয়েছিলো তার গ্রীবার সৌকর্য.

 

যদিও অধরে উদ্ভাস আকর্ণ রেখেছিলো ধরে

তবে হাসিও কখনো যেমন কান্নার অভিরূপ

তার কাঁদ অসহায় ঝুঁকেছিলো বিপন্ন বোধে,

 

যেনো প্রোথিত হৃদয়ে তার অপ্রাপ্তির দাবদাহ,

হয়তো অনুভব গভীরে কেউ আজো আরাধ্য

 

 

গুটিয়ে তোলা অধিকার

কৌশিক চক্রবর্ত্তী

 

কোনো একটা রাত নিঃশব্দে হারিয়ে যায়

তুমি বললে, চাঁদ নয়, তুমি মেঘের অনুসারী

যেদিন প্রথম কুয়াশা নেমেছিল

আমি স্নান সেরেছিলাম কাচের ঘরে

আরও কিছু ঝলসানো গাছ ঘিরে রেখেছিল তোমায়-

 

গাছেরা অবিনশ্বর

স্নানের ঘরটুকুও

রাস্তায় নিভে গেছে উদ্বৃত্ত আলো

আমার অক্ষর আজ অচেনা

মেঘলা বসন্তের দিকে যতিচিহ্ন ও অভিযোগ...

 

সেদিন চন্দ্রগ্রহণে লেগেছিল ঋতুপরিবর্তনের দাগ

একচিলতে ধূসর বুকে ক্ষমাশীল ঘুলঘুলি

 

সাহসী হয়েছি আরও

তীর্যক আলোর বিপরীতে গুটিয়ে তুলেছি খিদের অধিকার

 

 

 

অরণ্য ভ্রমণ 

আহসান জামান 

 

অরণ্যে এলে সমস্ত গন্তব্য ফুরিয়ে যায়, আকাশ থেকে 

ছুঁড়ে দেওয়া রোদ্দুরও পোষা বিড়ালের মতো 

এলিয়ে দেয় ছায়ার হাত পা মেলে। 

 

যখন আকাশ জুড়ে বৃষ্টির আমন্ত্রণে শুরু করে 

মেঘের গর্জন

এলোপাতাড়ি হাওয়া এসে ডাল পালায় পরিয়ে দেয় উৎফুল্লতার নাচ, আঁচড়ে পড়ে অরণ্যে দৈত্য দানবের রূপকথার গল্প আসর। 

 

অরণ্য এলে

স্তব্ধতার মুকুলে গেঁথে দেয় নৈশব্দ্যের হৈচৈ। 

অরণ্য মানচিত্রের মতো অসংখ্য শিকড়ে গড়ে-

তুমুল বন্ধুত্ব

 

 

 

 

বদলে বদলে যায়

নীলম সামন্ত

 

সকাল থেকে রঙ বদলাচ্ছে আকাশের 

কখনও রোদ

ধুন্ধুমার বৃষ্টি আবার কখনও কুয়াশার ঝটিকা

কেবল বদলে বদলেই যায় 

হৃৎপিণ্ডের কর্মসূচি 

চারপাশে অপ্রয়োজনীয় চুপচাপ 

ছায়ার পাশে সঙ্গম সারছে সারমেয় জুটি 

চৈত্রে হঠাৎ বৃষ্টি হলে বোধহয় ভাদ্রই লাগে 

কেউ কি গান গাইছে

কিংবা একটানা সাইকেলের বেল 

আবছা শোনা যায় 

কারোরই ঘর নেই 

সংকীর্ণ গণ্ডিতে ঘুমোয় 

অনেকটা সময় ফাঁদ পাতে 

আলোচনা গভীর হলে গুরুজনেরা বালিতে বসে 

নুন জলের ঢেউ গোনে। 

 

 

দাঁড়কাক 

হাসান ইমতিয়াজ 

 

উঠোনে ধান

ক্ষুধার্ত দাঁড়কাক উড়ে যায়

বারবার 

দুপুরের সুনসান জমা নিয়ে

বুকেতুমি আশ্চর্য বেঁচে থাকো 

 

রোদের চোখে চোখ রেখে 

লাউয়ের ডগার মতন বেড়ে ওঠো 

 

যেনো সেদিনের হলুদ 

বিকেলের পর খুন হওয়া 

নীলাভ জলরাশি

 

 

 

প্রাকৃত জীবন

সুমন শামসুদ্দিন

 

ভিন্নগতির ভিন্নজীবন, ভিন্নপ্রাণের সুরে,

জীর্ণ-স্মৃতির পুরোনো পত্র বাতাসে যায়নি উড়ে

সময়ের ধীর-গতিময়তায় জন্ম দিয়েছে কত!

পাথরকুচির প্রতিভাঁজে ভাঁজে সিক্তপাদপ শত;

 

শতস্মৃতি নিয়ে তটিনীর জল তার গন্তব্য খোঁজে-

জল-বাতাসের যুগল প্রবাহ নীরবের ভাষা বোঝে

মহাজলরাশি দৃষ্টে এলেই থমকে দাঁড়ায় মন,

স্রোতে মিশে যায় গাঢ় অনুভূতি মন-প্রাণ অনুক্ষণ

 

কিংশুক রঙে সেজেছে আকাশ সজীবতা ঢেকে যায়,

অংশুমালীর জ্যোতি প্রবলতা ঘুম ভেঙে ফিরে চায়

পান্থপাদপ দর্পে দাঁড়িয়ে বুকভরা তার জল,

তৃষিত পাখিরা ওড়ে চঞ্চল, বিলে ফোটে শতদল

 

সচকিত চাঁদ আঁধারে ঘুমায় বৈশাখী নীরদ ছায়ে,

গুরুগম্ভীর মেঘ নেমে আসে ক্ষয়িত জীবন নায়ে

বিষাদের ভারে পড়ন্ত রবি মুখ তুলে পুনঃ জাগে,

নিমিলীত সুর বেজে ওঠে প্রাণে সাঁঝহিন্দোল রাগে

 

আলোছায়া ঘেরা জীবনপ্রকৃতি বাহারি যে তার রং,

প্রকৃতির শত বিস্ময়ধারা রাঙে জীবনের ঢং

 

 

খোলামত 

তোফায়েল তফাজ্জল 

 

ঝোড়ো চরিত্র ধারণ করে ভাঙতে আসিনি কিছুই

বরং মাঠের মসৃণ-সবুজ সুর,

কেজি কেজি পাখির আওয়াজ,

দোলনারূপে দুলতে থাকা আবেগের দৃষ্টি মেলে 

পাকা ফল হয়ে ঝুলছি 

কাঙ্ক্ষিত হাত ও মুখের সাক্ষাৎ পেয়ে 

ধন্য হবো বলে। 

হর্ষে উচ্ছ্বসিত ঝরনায় সাঁতার কেটে 

দৈহিক ও মানসিক নোংরা 

ধুয়েমুছে ভাসিয়ে দেয়ার সদিচ্ছায়।  

 

বাগিচায় ফোটে ফুল, নীলিমায় চাঁদ,  

নাসিকার একটু নিচে মালটা কোয়া ঠোঁটে 

ফুটবে না অম্লান হাসিএ কি নয় রীতির খেলাপ

কেউ তো পাথুরে নয়

রক্তমাংসে গঠিত সবাই!

 

 

 

দি ব্লাইন্ড লাভ

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

 

জোন্স মৃদু হেসে পিটারসনকে অনুসরণ করতে লাগলেনপিটারসন লম্বা বারান্দা পেরিয়ে চলতে থাকলেনবারান্দা থেকে সবুজের সমারোহ দেখা যাচ্ছে, চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল জোন্সেরএত বড় পাঠাগারকে যেন গাছ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছেমাঝে মাঝে কাঠের তৈরি বসার জায়গাকয়েকটা জলতরঙ্গ উঠছে নামছেপরিবেশ এখানে একেবারে পার্কের মতোখালি পার্কের কোলাহলটুকু নেই। 

প্রায় দশ মিনিট বারান্দা পার হতে লাগল, তারপর যে জায়গাটায় পিটারসন থামলেন সেটা লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের স্টক সেকশনপ্রতিটা লাইব্রেরির বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করা থাকেযেমন সেন্ট্রাল হল মানে যেখানে সেমিনার বা লাইব্রেরির বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয় এছাড়া পাঠকক্ষ যেখানে বসে পাঠকেরা পড়তে পারেতবে পাঠকক্ষের বই কেউ বাড়ি নিয়ে যেতে পারে নাওখান থেকে নিয়ে পড়ার পর ওখানেই জমা দিতে হয়আর থাকে বিনিময় অংশ যেখানে বই বাছাইয়ের পর গ্রাহকেরা বই সংগ্রহ করেবই বাছাইয়ে লাইব্রেরি এখন অনেক আধুনিক হয়েছেআগে গ্রন্থাগারের কর্মীরা পাঠক কী বই চান তা জেনে নিজেরা নিয়ে এসে দিতকিন্তু এখন পাঠক নিজেই তার পছন্দের বই বাছতে পারেথোকে থোকে সাজানো থাকে বুকসেলফএই বুকসেলফেই সাজানো থাকে বইবুকসেলফগুলো যেখানে থাকে তাকেই বলে লাইব্রেরির স্টক সেকশনলাইব্রেরি অফ কংগ্রেস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে অন্যতমকাজেই এর স্টক সেকশন কতটা বড় হতে পারে বোঝাই যাচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয় গ্রন্থাগারটি ১৯৭৫ সালে তার ১৭৫ তম বর্ষ উদযাপন করেছেযদিও এর অনেক আগেই এর উৎপত্তি১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র তিন হাজার বই নিয়ে শুরু হয়েছিল এই গ্রন্থাগারতখন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফহারসন এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেনকিন্তু ১৮১৪ সালে যখন ব্রিটিশ সৈন্য এই গ্রন্থাগারে আগুন লাগিয়ে দেয় তখন গ্রন্থাগারটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়পরের বছর জেফহারসন তার নিজস্ব মূল্যবান সংগ্রহ দিয়ে গ্রন্থাগারটির পুনর্প্রতিষ্ঠা করেনএকশ আটান্ন মিলিয়ন সংগ্রহের বিশাল স্টক সেকশন দেখে জোন্স অভিভূত হয়ে যাচ্ছিলেনজরুরি ফোন পেয়েছিলেন জোন্সফ্লাইটে করে ৬১৬১ কিলোমিটার যাত্রা করার পর কথা বলার মতো আর অবস্থায় নেই, মনে হচ্ছে হোটেলে গিয়ে ডিনারটা সেরে কোনও রকমে শুতে পারলে বাঁচেনকিন্তু উপাই নেই , ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন মানে ইফলার সেক্রেটারি ইন চিফ মি. পিটারসন যখন ফোনটা করেছিলেন তার গলায় ছিল এক চরম উৎকণ্ঠাজোন্সের কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু এটুকু বলেছিলেমফোন রাখা মাত্রই বেরিয়ে পড়ো, ইটস অ্যান ইমারজেন্সি’। তারপর যেটুকু খবর অল্প সময়ের মধ্যে নিতে পেরেছিলেন ওয়াটসনের এক বিশ্বস্ত পি এ-র কাছ থেকে, তাতে এটুকুই জানতে পেরেছেন বিশ্বের উনিশটি বড় লাইব্রেরির কর্ণধারকে নাকি ফোন করে দেখা করতে বলা হয়েছেকিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকেই তো তিনি দেখতে পাচ্ছেন নাহয়তো পৌঁছাতে পারেননি অথবা আগেই সাক্ষাত করে গেছেন এমনটা হতে পারে। 

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে পিটারসনের সাথে একটা বড় রুমে এসে পড়েছেন বুঝতেই পারেননি জোন্সপিটারসন একটা সোফা দেখিয়ে জোন্সকে বসতে বললেন তারপর নিজেও বসলেনপাশের টেবিলে থাকা একটা বই হাতে নিয়ে জোন্সকে জিজ্ঞেস করলেন, কী নেবেন কফি না চা? জোন্স যেন এটাই শুনতে চাইছিলেন একটা ঢোক গিলে বললেন, এক কাপ কোল্ড কফিপিটারসন বেল বাজাতেই একজন হাজির হল, বললেন দুটো কোল্ড কফি আর শোনো আমি না বলা পর্যন্ত আপাতত এখানে কাউকে ঢুকতে দিও নাএরপর পিটারসন জোন্স এর দিকে তাকালেন বললেনআপনাকে কেন ডাকা হয়েছে জানেন?' 

জোন্স বললেন, আমি তো এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি নাপিটারসন হাতে নেওয়া বই এর পাতা উল্টোতে উল্টোতে বললেন, আমিও যে খুব একটা বুঝতে পেরেছি ঠিক তাও নাপিটারসন এবার উঠে দাঁড়ালেনঘরময় পায়চারি শুরু করলেনকিছুক্ষণ নীরবতাতারপর বলে উঠলেন, 'অ্যানড্রুজ ডি হোমসকে চেনেন?' 

হ্যাঁ আজ সকালেই খবরটা পড়লাম খুব খারাপ লাগলো এভাবে যে উনি মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে চলে যাবেন কেই বা জানত!' পিটারসন বইটা টেবিলে রেখে ডান দিকে থাকা বার্নিশ করা দামী কাঠের আলমারি থেকে আর একটা বাইন্ডিং করা বই বের করে জোন্সের হাতে দিলেনবইটার উপরে লেখা 'দি ব্লাইন্ড লাভ', নিচে লেখা অ্যানড্রুজ ডি হোমস

এটা তো অ্যানড্রুজ ডি হোমসের সেই বিখ্যাত উপন্যাস যার জন্য উনি নোবেল পেয়েছিলেন! তাই তো?' 

হ্যাঁ ঠিক এটাই সেই বিখ্যাত বইএবার ভেতরের পাতাগুলো দেখুন।'

জোন্স পাতা উল্টোতেই দেখলেন আশ্চর্য একটা পাতাতেও কোনো লেখা নেইপিটারসন জোন্সের দিকে তাকিয়ে বললেন, বিশ্বের সব কটা বড় লাইব্রেরিতে অ্যানড্রুজ ডি হোমসের যতগুলো বই ছিল, তার সব কপির এই একই অবস্থা। 

'কী বলছেন আপনি এটা কী করে সম্ভব!' 

পিটারসন চুরুট ধরায়বলেন, আমার মনে হয় এটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপাটির ওপর আঘাতসেই জন্যেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আপনাদের সকলকে ডাকাপৃথিবীজুড়ে যখন মানুষে মানুষে ভালবাসা অন্ধ হয়ে যায়, তখন হৃদয়ে নয় মাথায় আঘাত করা হয়