https://www.bartomansylhet.com/

3649

bangladesh

প্রকাশিত

২৫ মার্চ ২০২৩ ০১:৩১

আপডেট

৩০ নভেম্বর -০০০১ ০০:০০

রমজানের ঐতিহাসিক পটভূমি

রমজানের-ঐতিহাসিক-পটভূমিকোন বিষয়ে জ্ঞানলাভের জন্য এর ঐতিহাসিক পটভূমি পর্যালোচনা করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আগে ছিলো না এমন কোনো বিষয় গ্রহণের ব্যপারে মানুষের মধ্যে একটা স্বভাবজাত ইতস্ততা বা আড়ষ্টতা রয়েছে। তা দূরিকরণের উদ্দেশ্যে তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন যাচাই করে দেখতে হয়। রমজানের পরিপ্রেক্ষিতেও এ সত্যটি উপলব্ধি করা যায়। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের ঐতিহাসিক পটভূমির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগন! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর ফরজ করা হয়েছিলো।'এ আয়াতে আগে সব শরিয়তেই রোজা ফরজ ছিলো বলে ঘোষণা করা হয়েছে। একটি হাদিসেও এ কথাটি বর্ণিত হয়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বছর ঘুরে রহমত-বরকত-মাগফিরাত ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। ঘরে ঘরে রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পবিত্র এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিবাভাগে পানাহারবঞ্চিত থেকে সংযমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মহান আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ কামনা করবেন এবং রাত কাটাবেন এবাদত-বন্দেগিতে।

আল কুরআন থেকে জানা যায়, আমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের প্রতিও রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আদিপিতা হজরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ) পর্যন্ত সব নবীদের উম্মতের ওপর রোজা ছিল ফরজ ইবাদত। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতের রোজার সময় ও সংখ্যার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। আগেকার যুগে রাতে নিদ্রা যাওয়া থেকেই রোজা শুরু হয়ে যেত। ইফতারের পর থেকে শয্যা গ্রহণের পূর্বপর্যন্তই শুধুমাত্র পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ছিল। বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব কিছু হারাম হয়ে যেত। আদিপিতা হজরত আদম (আ) থেকে হজরত নূহ্ (আ) পর্যন্ত প্রতিটি মুসলমান, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। কেননা নবী করিম (সা) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন এ রোজাগুলো পালন করতেন। হিজরতের দ্বিতীয় বছর শাবান মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামিন রোজার আদেশ নাযিল করেন। সে বছর অর্থাৎ হিজরী দ্বিতীয় বছর থেকেই উম্মতে মোহাম্মদের ওপর রমজানের ৩০টি রোজা ফরজ করা হয়। আল্লাহ রাব্বুলআলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, “রমজান মাস, এ মাসেই কোরআন নাযিল হয়েছে গোটা মানবজাতির জন্য হিদায়াত ও সত্য পথ প্রদর্শক, সুস্পষ্ট উপদেশাবলীতে পরিপূর্ণ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে। অতএব তোমাদের মধ্যকার যে লোক এ মাস পাবে, সে যেন এ মাস ভরে সিয়াম পালন করে।” (সুরা বাকারা-১৮৫)

ইহুদীরা রোজা রাখত ৪০ দিন, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা রোজা রাখত ৫০ দিন। আর হজরত মুহাম্মদ (স) এর উম্মতের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে ১ মাসের জন্য। খ্রীষ্টানরা পরবর্তীকালে রোজা পরিবর্তন করে, ঘুরিয়ে দেয় দিনের সংখ্যা। (বায়হাকী শরীফ ও ফাত্হুল বার)

সর্বপ্রথম কোন্ রোজা ফরজ ছিল এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে, আশুরার রোজা ফরজ ছিল, কারো কারো মতে প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। কেননা নবী করিম (সা) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন এ রোজাগুলো পালন করতেন। হিজরতের দ্বিতীয় বছর শাবান মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামিন রোজার আদেশ নাযিল করেন। সে বছর অর্থাৎ হিজরী দ্বিতীয় বছর থেকেই উম্মতে মোহাম্মদের উপর রমজানের ৩০টি রোজা ফরজ করা হয়।

আত্মশুদ্ধির তাগিদে আদিকাল থেকেই বিভিন্ন বর্ণ, গোত্র ও ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রোজা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন চীনা সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ রোজা রাখত। অনুরূপভাবে খ্রিস্টান পাদ্রী, পারসিক অগ্নিপূজক এবং হিন্দু-যোগীদের মধ্যেও রোজার (উপবাস) রেওয়াজ ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের রোজার প্রকৃতি ছিল এরূপ যে, তারা রোজা থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, তরি-তরকারি ইত্যাদি ভক্ষণ করা হতে বিরত থাকত বটে, কিন্তু ফলমূল ও পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকত না। কিন্তু ইসলামে রোজার যে নীতি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এ দুই বিপরীতমুখী প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ এই রমজান মাসে সকল মুসলমানের কর্তব্য হলো, রোজার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে পবিত্র রোজার মাসের ফরজ আমল পালনে ব্রতী হওয়া এবং এর পূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়মনো বাক্যে দোয়া করা।